Wednesday 13 August 2014

দিনেমার, ওলন্দাজ , ফিরিঙ্গি,বর্গী,অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান কারা ?

দিনেমার:

দিনেমার'(ড্যানিশ):'জাতি ডেনমার্কের অধিবাসীরা বাংলাদেশে দিনেমার নামে পরিচিত। সতেরো শতকের প্রথম দিকে দিনেমাররা পূর্বাঞ্চলে তাদের বাণিজ্যিক কর্মকান্ড শুরু করে। ডেনমার্কের রাজা চতুর্থ ক্রিশ্চিয়ান ১৬১৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মার্চ একচেটিয়া বাণিজ্যিক অধিকার সম্বলিত একটি অনুমতিপত্রের মাধ্যমে ভারতে বাণিজ্যের জন্য দিনেমার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মাত্র ১৮টি দিনেমার জাহাজ ভারতে পাঠানো হয়েছিল। এ জাহাজগুলি মশলাচীনামাটির বাসন-কোসনহীরা ইত্যাদি নিয়ে দেশে ফিরে।

ওলন্দাজ (ডাচ)

ōlandāja হল্যাণ্ডের অধিবাসী.
Hollandaise উচ্চারণ অলাঁদেজ্; Holandes উচ্চারণ ওলাঁদেশ


ফিরিঙ্গি

১. ইয়োরোপীয় জাতি
২. ভারতীয় ও ইয়োরোপীয়ের সংমিশ্রণে উত্পন্ন বর্ণসংকর জাতিইউরেশীয় জাতি।

আবুল ফজলের 'আইন-ই- আকবরীও ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের অন্নদামঙ্গলে 'ফিরিঙ্গিবলতে শুধু পর্তুগিজদের বোঝানো হয়েছে। পরে ইউরোপবাসীর সঙ্গে ভারতীয়দের মিশ্রণে সৃষ্ট সঙ্কর জাতও ফিরিঙ্গি আখ্যা পায় (বলা তো যায় নাফিরিঙ্গীর বাচ্চা কখন রঙ বদলায় - দেশে বিদেশেসৈয়দ মুজতবা আলী)।
অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি বা হ্যান্সম্যান অ্যান্টনি (ইংরেজি: Anthony Firingee বা Hensman Anthony) (জন্ম:১৭৮৬ - মৃত্যু:১৮৩৬)যিনি প্রথম ইউরোপীয় বাংলা ভাষার কবিয়াল। তিনি একজন পর্তুগীজ। তিনি কবিগানের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।
অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি ১৯শতকের প্রথম দিকে বাংলাতে আসেন এবং পশ্চিমবঙ্গের ফরাসডাঙ্গা নামক এলাকায় বসবাস শুরু করেন। তিনি সৌদামিনি নামক এক হিন্দু ব্রাহ্মন মহিলাকে সতীদাহ হওয়ার থেকে উদ্ধার করেন ও বিবাহ করেন। তিনি কলকতার দক্ষিণে একটি মা কালিকার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেনযা ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি নামে পরিচিত।


বর্গি

পশ্চিম বাংলার সমাজজীবনে বর্গি আক্রমণের প্রভাব ছিল অপরিসীম। আজও এই অঞ্চলের ছেলেভুলানো ছড়ায় বর্গি আক্রমণের উল্লেখ পাওয়া যায়
ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে …..”
অষ্টাদশ শতাব্দীর লুটতরাজপ্রিয় অশ্বারোহী মারাঠা সৈন্যদলের নাম। ১৭৪১ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত দশ বছর ধরে বাংলার পশ্চিম সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে নিয়মিতভাবে লুটতরাজ চালাত বর্গিরা। বর্গিহানা এই সময় একপ্রকার বাৎসরিক ঘটনায় পরিণত হয়েছিল।
১৭৪০ সালের এপ্রিল মাসে আলিবর্দি খাঁ সরফরাজ খাঁকে পরাজিত ও নিহত করে বাংলার নবাব হন। সরফরাজ খাঁর শ্যালক তথা উড়িষ্যার নায়েব নাজিম (উপশাসক) রুস্তম জং আলিবর্দি খাঁর কর্তৃত্ব অস্বীকার করেন। আলিবর্দি বালাসোরের নিকট ফলওয়াইয়ের যুদ্ধে রুস্তম জংকে পরাজিত করেনিজের ভাইপোকে উড়িষ্যার উপশাসক নিয়োগ করেন। রুস্তম জং এরপর নাগপুরের মারাঠা শাসক প্রথম রঘোজি ভোঁসলের সাহায্য প্রার্থনা করেন। মারাঠাদের সাহায্যে রুস্তম জং উড়িষ্যার অধিকার পুনরুদ্ধার করেন। এদিকে মারাঠারা বাংলার পশ্চিম সীমান্তবর্তী গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক লুটতরাজ শুরু করে। আলিবর্দি পুনরায় উড়িষ্যায় এসে রুস্তমকে পরাজিত করেন। কিন্তু তিনি মুর্শিদাবাদে প্রত্যাবর্তনের পূর্বেই ভোঁসলে মারাঠা সর্দার ভাস্কর পণ্ডিতকে অশ্বারোহী বাহিনীর নেতা করে বাংলায় পাঠান। তাঁরা পাঞ্চেত হয়ে বাংলায় প্রবেশ করে ব্যাপক লুণ্ঠন চালাতে থাকেন।
পরবর্তী দশ বছর বর্গিরা নিয়মিত বাংলায় লুটতরাজ চালাতে শুরু করে। সমসাময়িক ঐতিহাসিকগণ বর্গিসন্ত্রাস এবং বর্গিদের অতর্কিত আক্রমণ পদ্ধতির সামনে নবাব বাহিনীর অসহায়তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন। আলিবর্দি খাঁ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রভূত বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেনকিন্তু বর্গি আক্রমণ ঠেকাতে সমর্থ হননি। নবাবের বাহিনী মারাঠা অশ্বারোহীদের গতি ও দক্ষতার সামনে অসহায় ছিল। কেবলমাত্র গঙ্গা-হুগলি নদীই বর্গি হানা ঠেকাতে সক্ষম হয়। কয়েকটি ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া বর্গিরা হুগলি নদী পার হতে পারেনি।
১৭৫১ সালের মে মাসে আলিবর্দি খাঁ মারাঠাদের সঙ্গে সন্ধি করেন। এই সন্ধিচুক্তি অনুযায়ী তিনি উড়িষ্যার অধিকার ছেড়ে দেন। এরপর বাংলায় বর্গি হানা বন্ধ হয়।


অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান

অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ঔপনিবেশিক শাসনামলে ভারতীয় সমাজে একটি সম্পূর্ণ পৃথক বৈশিষ্টের বর্গ বা জনগোষ্ঠী। সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে যেসব ইংরেজ বণিক ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ভারতে আসেব্রিটেনে ফিরে যাবার পর তাদের অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান নামে অভিহিত করা হতো। এদেরকে ইস্ট ইন্ডিয়ানও বলা হতো এবং খুব ধনীদের বলা হতো নবাব। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ইন্ডিয়ান’ বা ইস্ট ইন্ডিয়ানদের গড়ে তোলা শক্তিশালী লবি এবং ব্রিটিশ সমাজে নবাবদের প্রাধান্যের উল্লেখ দেখা যায় অষ্টাদশ শতকের ইংরেজি সাহিত্যে। কিন্তু ভারতের অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা ছিল সম্পূর্ণ পৃথক বৈশিষ্টের নব্য সামাজিক শ্রেণী। এরা ছিল ব্রিটিশ পিতা ও ভারতীয় মাতার সন্তান। স্থানীয় বাঙালিরা সংকরজাত এই অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের বর্ণসংকর’ রূপে অবজ্ঞা করত এবং এদের সঙ্গে সকল প্রকার সামাজিক সম্পর্ক পরিহার করত।

ইতিহাসে দেখা যায় যেস্পেনীয় বা পর্তুগীজব্রিটিশ বা মুগল সকল বিদেশী শাসনামলে এই বিদেশীরা যে দেশেই বসতি স্থাপন করেছে সেখানে প্রায় অপরিহার্যভাবেই সৃষ্টি করেছে এই মিশ্র ধরনের সম্প্রদায়। বাংলায়ও এর ব্যতিক্রম ঘটে নি। উনিশ শতকের প্রথম দিকের পূর্ব পর্যন্ত ব্রিটিশ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকতাব্যবসায়ী ও ভাগ্যাম্বেষী অভিযাত্রিদের খুব কমসংখ্যকই বাংলায় বসবাসের জন্য তাদের পরিবার পরিজনকে সঙ্গে নিয়ে আসতেন। বাংলায় তাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করার জন্য এদের অনেকের মধ্যেই রক্ষিতা ও দাসী রাখার প্রবণতা দেখা যায়। এদের কিছুসংখ্যক এদেশীয় মহিলাদের বিয়েও করে। উনিশ শতকের শেষের দিকে এদের সন্তান-সন্ততিরা বেশ বড় আকারের একটা সম্প্রদায় গড়ে তোলে। এসব সন্তানদের বিশেষত বৈধ সন্তানদের বড় একটা অংশকে শিক্ষার জন্য ব্রিটেনে পাঠানো হতো। ব্রিটিশ সমাজে তাদের অবনমিত অবস্থার কারণে বাধ্য হয়ে তারা চাকরির সন্ধানে নিজেদের জন্মভূমিতে ফিরে আসে। প্রধানত রেলওয়েস্টীমার সার্ভিসডাক বিভাগ এবং নিম্নস্তরের সরকারি পদেই এই বর্ণসংকররা বেশিরভাগ চাকরি লাভ করে। পরে তারা পাট ব্যবসাসহ নানা ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক সংস্থায় যোগ দেয়।

9 comments:

  1. ভালো লাগলো পড়ে।

    ReplyDelete
  2. সুন্দর হয়‌েছে। ধন‌্যবাদ

    ReplyDelete
  3. সহজ সুন্দর বর্ণনা পড়ে ভাল লাগল। দিনেমার, ওলন্দাজ, স্পেনীয়, পর্তুগিজ, ইঙরেজ, ফরাসি - এসব ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে কারা কখন বাংলায় প্রথম প্রথম এসেছিল ও মসলাপাতি ছাড়া বাঙলা থেকে কী কী নিয়ে যেত, অর্থাৎ কীসের ব্যবসা করত তার ইঙ্গিত দিলে আরও জানতাম।

    ReplyDelete
  4. তথ্যবহুল লেখা। বেশ সাবলীল ভাষায়। উপকৃত হলাম। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  5. ভালো লাগলো

    ReplyDelete
  6. Elder brother, perhaps you r from afmkuh, JU.
    I am from 44 geography of ju. Your article helped me, thanks for this collection.

    ReplyDelete
  7. https://mdmominurrahman.blogspot.com/

    ReplyDelete